Golden Bangladesh
Eminent People - এ কে খন্দকার

Pictureএ কে খন্দকার
Nameএ কে খন্দকার
DistrictPabna
ThanaNot set
Address
Phone
Mobile
Email
Website
Eminent Typeমুক্তিযুদ্ধ
Life Style
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ আব স্টাফ এ কে খন্দকারকে তাঁর কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। সেখানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী, খোন্দকার মোশতাক সবাই উপস্থিত ছিলেন। এ কে খন্দকারকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রতিনিধিত্ব করার কথা বলা হলো। প্রস্তাবটি শুনে এ কে খন্দকার বিমোহিত হয়ে যান। কারণ একটি ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছেন তিনি। তড়িঘড়ি করে তিনি যোগাযোগ করেন ভারতীয় সামরিক বাহিনীর হেডকোয়ার্টারের সাথে। সেখান থেকে তাঁকে বলা হলো কলকাতার দমদম বিমান বন্দরে চলে যাবার জন্য। এ কে খন্দকার সেখানে যান। গিয়ে দেখেন সেখানে জেনারেল অরোরা, জেনারেল জেকবসহ ভারতীয় সামরিক বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে ঐতিহাসিক একটি মুহুর্তের সাক্ষী হতে প্রথমে আগরতলায় আসেন তিনি। তারপর সেখান থেকে ঢাকায় পদার্পণ করেন। পরাজিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জেনারেল নিয়াজী তাঁদেরকে বিমান বন্দরে স্বাগত জানান। সেদিনের সেই ঐতিহাসিক মুহুর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে এ কে খন্দকার লেখেন, 'আমরা বিমান বন্দর থেকে সোজা রেসকোর্সের মাঠে গেলাম। সেখানে আস্তে আস্তে লোকের ভীড় হচ্ছিল। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু যেখান থেকে ভাষণ দিয়েছিলেন সেখানে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। জনগণ আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়েছিল। তারা জেনারেল অরোরাকে কাঁধের উপর উঠিয়ে নেয় এবং বিজয়োল্লাসে মেতে ওঠে। জেনারেল নিয়াজীকে খুব বিমর্ষ দেখা যাচ্ছিল।' সেদিনের সেই ঐতিহাসিক ঘটনা আজও এ কে খন্দকারকে পুলকিত করে, রোমাঞ্চিত করে। তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠতম ঘটনা এটি। একটি জাতির জন্মের জন্য তিনি যেমন নিজে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন ঠিক তেমনি জাতির জন্মের মূহুর্তটিকেও প্রত্যক্ষ করেছেন উত্তেজনা নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধে অভূতপূর্ব অবদান রাখার জন্য তিনি 'বীর উত্তম' খেতাবে ভূষিত হন। আব্দুল করিম খন্দকার যিনি এ কে খন্দকার নামেই সমধিক পরিচিত। তাঁর জন্ম ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি, পিতার তৎকালীন কর্মস্থল রংপুর শহরে। তাঁর পৈত্রিক নিবাস পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার ভারেঙ্গা গ্রামে। তাঁর পিতা খন্দকার আব্দুল লতিফ ব্রিটিশ আমলে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন এবং মাতা আরেফা খাতুন ছিলেন একজন আদর্শ গৃহিনী। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে এ কে খন্দকার ছিলেন তৃতীয়। পিতার চাকুরির সুবাদে আব্দুল করিমের শিক্ষা জীবনের শুরু হয় বগুড়া শহরে। তিনি সেখানে বগুড়া করোনেশন স্কুলে কিছুদিন পড়াশুনা করেন। তারপর পিতার বদলির কারণে তাঁদেরকে নওগাঁ চলে যেতে হয়। সেখানে নওগাঁ করোনেশন স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল এবং মালদা জেলা স্কুলে। এ কে খন্দকার ১৯৪৭ সালে মালদা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। তখন ভারত বিভাগের সময়। এ কে খন্দকার পূর্ববঙ্গে চলে আসেন। পূর্ববঙ্গে এসে রাজশাহী সরকারি কলেজে ভর্তি হন। তিনি সেই কলেজ থেকে ১৯৪৯ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। এরপরই যোগ দেন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর জিডি (পি) ব্রাঞ্চে এবং কমিশন প্রাপ্ত হন। এ কে খন্দকার ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আরপিএএফ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ফাইটার স্কোয়াড্রন পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান এয়ার ফোর্স একাডেমিতে ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এবং ১৯৫৮ সালে ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর স্কুলের ফ্লাইট কমান্ডার নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৬০ সাল পর্যন্ত জেট ফাইটার কনভারশন স্কোয়াড্রেনেও ফ্লাইট কমান্ডার পদে দায়িত্ব পালন করেন। পাকিস্তান এয়ার ফোর্সে কর্মরত অবস্থায় এ কে খন্দকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এ কে খন্দকার ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের জেট ফাইটার কনভারশন স্কোয়াড্রন-এর স্কোয়াড্রন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্কোয়াড্রন কমান্ডার, জেট ফাইটার কনভারশন স্কোয়াড্রন, অফিসার কমান্ডিং, ট্রেনিং উইং পিএএফ একাডেমি (১৯৬৫) এবং প্রেসিডেন্ট, পিএএফ প্ল্যানিং বোর্ড (১৯৬১) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার ১৯৬৫ সালে স্টাফ কলেজ কোর্স সম্পন্ন করেন। এবং ঢাকাস্থ পিএএফ ঘাঁটিতে সেকেন্ড ইন কমান্ড পদে নিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ কালো রাত্রিতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র বাঙালীর উপর। চালায় বর্বর গণহত্যা। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে এ কে খন্দকার তাঁর অধীনস্থ বাঙালী অফিসার ও সৈন্যদের নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল মুক্তিবাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা চা বাগানে পরিবৃত আধা-পাহাড়ী এলাকা তেলিয়াপাড়ায় অবস্থিত দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গলের সদর দপ্তরে একত্রিত হন। এটি ছিল হবিগঞ্জ জেলায়। জেনারেল এম.এ.জি. ওসমানী, মেজর কাজী নূর-উজ্জামান, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর নুরুল ইসলাম, মেজর শাফায়েত জামিল, মেজর মইনুল হোসেন চৌধুরী এবং আরো অনেকে সেদিন সেখানে একত্রিত হয়েছিলেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র প্রতিরোধের প্রথম দিকনির্দেশনা আসে এই সম্মেলন থেকেই। ১০ এপ্রিল তাজউদ্দীন আহমদ-এর নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রবাসী সরকার 'মুজিবনগর সরকার' গঠিত হয়। এ কে খন্দকার ১৫ মে তাঁর দলবলসহ ভারতের আগরতলায় পৌঁছেন। ১৬ মে কলকাতায় চলে যান। সেখানে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ওসমানীর সাথে দেখা হয়। তাঁর পরামর্শেই ১৯/২০ মে দিল্লীতে যান বিমান বাহিনীর জন্য বিমান সংগ্রহ করতে। এরজন্য ভারতীয় বিমান বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করেন। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক ও নানাবিধ কারণে তখনই কোনো বিমান দিতে অস্বীকার করে। তবে তাঁরা বলে দেয়, সময় আসলেই তাঁরা সব ধরনের সহযোগিতা করবে। মে মাসের শেষের দিকে এ কে খন্দকার আবার কলকাতায় ফিরে আসেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, মুক্তিবাহিনী স্থলপথে যুদ্ধ চালাবে। এসময় এ কে খন্দকারকে মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ মনোনীত করা হয়। মুক্তিবাহিনীর জন্য রিক্রুটমেন্ট, ট্রেনিং এবং তাঁদেরকে বিভিন্ন সেক্টরে পাঠানো এসব দায়িত্ব দেয়া হয় এ কে খন্দকারকে। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে বিমান বাহিনীর সকল পাইলট, টেকনিশিয়ান স্থলযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। পরে বাংলাদেশের জন্য নিজস্ব এয়ার ফোর্স ইউনিট গঠন করা হয়। এজন্য ভারতীয় বিমান বাহিনী থেকে একটা অটার, একটা অলওয়েট হেলিকপ্টার এবং একটা ডিসি-৩ ডাকোটা বিমান নেয়া হয়। এ নিয়ে মুক্তিবাহিনী বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে বিশেষ সাফল্য অর্জন করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে পরে এ কে খন্দকার নবগঠিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা চিফ অব স্টাফ হন এবং বিমান বাহিনীর প্রধান হিসেবে নবগঠিত এই বাহিনীর যথেষ্ট উন্নতি সাধন করেন। তিনি ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত এই পদে সততা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এসময় তিনি জাতীয় পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমানের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন (১৯৭২-১৯৭৩)। এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশনার এবং ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ভারতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বর হতে নভেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা হিসেবে একই বছর নভেস্বর মাসের শেষদিকে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৯০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৯৮ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা-২ নির্বাচনী এলাকা থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য মনোনীত হন। ১৯৮৬-১৯৯০ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে পাবনা জেলায় যোগাযোগ, শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ করেন। ২০০৮ সালেও তিনি পাবনা-২ নিজ নির্বাচনী এলাকা থেকে পুনরায় জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে কজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সৎ ও আদর্শবান নেতা হিসেবে পরিচিত এ কে খন্দকার তাঁদের অন্যতম। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রত্যক্ষ বিরোধিতা করেছিল তারা যুদ্ধাপরাধী। স্বাধীনতার ৩৮ বছর অতিক্রান্ত হলেও আজও এদের বিচার হয়নি। নানাদিক থেকেই এ দাবি আজ স্বাধীনতার পক্ষের প্রতিটি নাগরিকের। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার সেক্টর কমান্ডার ফোরাম। এ কে খন্দকার সেই সেক্টর কমান্ডার ফোরামের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য দেশের প্রতিটি প্রান্তে জনমত গড়ে তোলার কাজে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। স্কুল ও কলেজ জীবনে এ কে খন্দকার একজন কৃতি ফুটবলার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। রিসালপুর পাকিস্তান এয়ার ফোর্স কলেজে অধ্যায়নকালে তিনি উক্ত কলেজের ফুটবল দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন। সরকারী দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনে সমাজকল্যাণমূলক কাজের সাথে জড়িত। তিনি বিভিন্ন সময় ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ইতালি, গ্রীস, সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, ভারত, ভুটান, আফগানিস্তান, লিবিয়া, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, মরক্কো, সৌদি আরব, কুয়েতসহ বিশ্বের প্রায় ৪১টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। পারিবারিক জীবনে এ কে খন্দকার বিবাহিত। তিনি দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক। ত

থ্যসূত্র:www.gunijan.org.bd
Rationale
UploaderRaihan Ahamed